উঁহু, এটা স্পেইনের কোথাও না, এটা ইন্ডিয়ায়, আগ্রায়।
স্পেইনে গিয়ে ইতিহাসের পাতায় পাতায় আর জায়গায় জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে আমি শুধু বার বার ঘুরে ফিরে ভাবছিলাম ইন্ডিয়াতে মুসলিমদের ইতিহাসের কথা আর ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বার বার তুলনা করছিলাম দুই ইতিহাসকে।
একটা ওয়েস্টে একটা ইষ্টে।
তারিক বিন যিয়াদ যখন ৭১১ তে স্পেইনের কর্দোবায় আসলেন কাউন্ট জুলিয়ান এর আমন্ত্রণে, যেহেতু কিং রডরিক কাউন্ট জুলিয়ানের মেয়ে ফ্লোরিন্ডাকে এবিউজ করেছিলো, কাউণ্ট জুলিয়ান তখন মুসলিমদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থানের সুনাম শুনে মুসলিমদেরকে সিক্রেটলি ইনভাইট করেছিলো স্পেইন দখল করতে আসতে,
একদম হুবুহু সেই একই বছর,
ঠিক ৭১১ তে মুহাম্মাদ বিন ক্বাসিম তখন ভারতবর্ষের সিন্ধ প্রদেশে এসেছিলো কারণ রাজা দাহীর ব্যার্থ হয়েছিলো মুসলিম ট্রেডার্স যাদেরকে যাদের পরিবার সহ ডাকাতরা ধরে নিয়ে গিয়েছে, সেই ডাকাতদেরকে ধরতে/শাস্তি দিতে।
না তারিক্ব বিন যিয়াদ, না মুহাম্মাদ বিন ক্বাসিম- কেউই শুধু শুধু স্পেইন বা ইন্ডিয়া স্রেফ জবর দখল করতে আসেননি!
ইতিহাসের শিখার শুরুই হতে হবে বিজয়ীদের লেখা ইতিহাসকে অস্বীকার করে। নাহলে আমরা গন্ডমূর্খই থেকে যাবো। নাহলে আমরা না পারবো নিজেদের আসল পরিচয় বুঝতে, না পারবো নিজেদের আত্নবিশ্বাস উদ্ধার করতে।
ইসলাম ওয়াজ স্প্রেড বাই সোওর্ড- পৃথিবীর ইতিহাসে এত বড় ডাহা মিথ্যা কথা, প্রোপাগান্ডা আর দুইটা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অথচ এমনকি শিক্ষিত মুসলিমরাও এই কথা বিশ্বাস করে!
আমাকে অনেকেই বলে- ইসলামের ইতিহাস মানেই তো খালি রক্তপাত!
স্পেইনের আল হামরায়, মেইন এন্ট্রেন্সের কাছে বসে, আমার চোখে পানি চলে আসছিলো বার বার, বুকটা কীভাবে যে মোচড় দিচ্ছিলো, ইশ, এত ইগনোরেন্ট আমরা বেশীরভাগ মুসলিমরা-
ওয়েস্টের শিখিয়ে দেয়া ইতিহাস গিলতে গিলতে আমরা নিজেরাই নিজেদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেদেরকে ভিলেন বলি,
অথচ ইতিহাস কীভাবে সাক্ষী দিচ্ছে- মুসলিমরা না, বরং উল্টা মুসলিমদের রক্ত দিয়ে লাল হয়ে গিয়েছে ইতিহাস!
১৬ শতাব্দীতে স্পেইনের রাস্তায় রাস্তায় ঝুলেছে মুসলিমদের লাশ।
১৮/১৯ শতাব্দীতে প্রায় একইরকমের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ভারতবর্ষে। এখন যে যায়গাতে আমরা উত্তরপ্রদেশ বলে জানি, সেখানে কাজী আসগারী বেগম নামের ফ্রীডম ফাইটার, যার নিজের ছেলে কাজী আব্দুর রহীম-ও বৃটীশদের বিরুদ্ধে গরিলা যুদ্ধ করে যাচ্ছিলো, বৃটিশরা প্রথমে ধরে ফেলে আসগারী বেগমকে। পাবলিকলি সবার সামনে জীবন্ত অবস্থায় ঠিক জোয়ান অফ আর্কের মত পুড়িয়ে মারে আসগারী বেগমকে, যেন আব্দুর রহীম আর তার সাথীরা মা-কে বাঁচাতে বেরিয়ে আসে।
মাত্র পঁচিশ বছর বয়সী হাবীবাকে আরো এগারো জন মহিলা ফ্রীডম ফাইটার সহ একসাথে পাবলিকলি ফাঁসি দিয়েছিলো বৃটিশরা।
আমি আলহামরার সামনে দাঁড়িয়ে যেন দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছিলাম-
একদিকে মুহাম্মাদ দ্য টুয়েলফথ্- স্প্যানিশ ভাষায় যাকে কিং বোয়াবদিল বলে, গ্রানাডা তুলে দিচ্ছে ফার্দিনান্দ আর ইসাবেলার হাতে,
আরেকদিকে সিরাজউদ্দৌলা, পলাশীর যুদ্ধ থেকে পালাতে পালাতে মীর জাফরের বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে মীর জাফরের ডাইরেক্ট নির্দেশে খুন হয়ে যাচ্ছে...
আর তারপর,
স্পেইনের রাস্তায় রাস্তায়
আর ইন্ডিয়ার পথে পথে মুসলিমদের লাশ আর লাশ...
এক ইতিহাস ঘুরে এলাম। 4444444
কিন্তু ঘরের ইতিহাসই এখনো দেখা হলো না আমার।
কাঁচমহলের মত যেসব ধ্বংসাবশেষ এখনো টিকে আছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বুক জুড়ে, সে ইতিহাস স্পেইনের মুসলিমদের ইতি
তই ভীষণ রকম মর্মান্তিক আর কষ্টের...
আমি ঠিক করেছি, জীবনে কখনো যদি, কোনোদিন পিএইচডির মত বড় কোনো রিসার্চ প্রজেক্টের সুযোগ পাই, তাহলে সে রিসার্চ স্পেইন আর ইন্ডিয়ার মুসলিমদের ইতিহাসে মুসলিম মহিলাদেরকে নিয়ে করবো। ইনশাআল্লাহ।
0 Comments:
Post a Comment